রশিদের একদিন
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:৫২:০৩ রাত
একটা সুখস্বপ্ন দেখছিল রশীদ। যদিও সুজন ওকে মফিজ ডাকে। আমরা রশিদ ই ডাকবো। ঘুমের ভিতরই সে বুঝতে পারলো যে, বাসটা কোনো এক যায়গায় দাঁড়ানো অবস্থায় আছে। অনেক দিনের অভ্যাস। এখন কি ঘুম কি জাগরণ- সব অবস্থায় ই রশীদ বুঝতে পারে আশেপাশে কি চলছে। এই যে, এখন স্বপ্ন দেখছে, কিন্তু অবচেতন মন ঠিকই বুঝেছে বাসটা দাঁড়িয়ে আছে।এটাও বা কিভাবে সম্ভব?
স্বপ্নে দেখছিলো একটা খালের পাড়। কয়েকজন দাঁড়িয়ে পানিতে মুত্রত্যাগ করছে। কেউ কেউ বসে করছে। রশীদ ওদের হিসি করা দেখছে। আর হাসছে। হঠাৎ দমকা বাতাস প্রস্রাব উড়িয়ে নিয়ে রশীদের মুখের এক পাশ ভিজিয়ে দিলো। আর যারা হিসি করছিল এবার তাদের অট্টহাসিতে চারপাশ কেঁপে উঠল। মুহুর্তে ওর হাত নিজের মুখে ঊঠে এলো। ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। সত্যিই তো মুখটা ভেজা ভেজা লাগছে। আর হাসির শব্দ এখনো মিলিয়ে যায় নি।
পুরাপুরি জেগে উঠে সব বুঝতে পারলো। আকাশ থেকে ঊড়ে যাবার সময় একটা কাক ওর উপর এইম করেছিলো। সেটা সরাসরি ওর মুখের একপাশে। ছাদের উপর ওর মতো আর এক মফিজ সেটা দেখে অট্টহাসি হাসছে। রশীদ চেহারাটা ভয়ংকর করে ফেললো। সাপের মত দৃষ্টি নিয়ে ওই লোকের দিকে তাকিয়ে ওর কলিজা কাঁপিয়ে দিলো। শেষে ওই লোকের কাঁধ থেকে গামছাটা নিয়ে মুখে লাগা কাকের গু মুছে গামছাটা আবার তার কাধে ঝুলিয়ে দিলো।
যেন কিছু ই হয় নি, এমন ভাব করে সেই গামছাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলোঃ বিড়ি খাবা? উত্তরে কিছুই বলল না ওই লোক।
বিড়ি ও ম্যাচটা নিজের হাতে রেখেই রশিদ আবারো বলেঃ আমরা সবাই একে অপরের ভাই না?
গামছাওয়ালা বললোঃ হু।
রশীদঃ হু কিরে? বল জী জনাব।
গামছাওয়ালাঃ জী জনাব।
রশীদঃ এইতো লাইনে আসছোস। আমরা যদি ভাই ই হই, তবে একজনের দুঃখে অন্যজন কেন হাসবো?
গামছাওয়ালাঃ আর হাসবো না। জী জনাব ভুল হইয়াছে।
রশীদঃ ভুল স্বীকার করাও বিরাট বাহাদুরির কাজ। সবাই এইটা পারে না। নাও, বিড়ীটা ধরাও। অনেক বাহাদুরির কাজ করছ। এইটা তোমার পুরস্কার।
গামছাওয়ালাঃ না জনাব, আমি বিড়ি পান করি না। এইটা শইলের জন্য খতির কারণ হইবে। আপনেও ধরাইয়েন না।
কিছুটা অবাক হয়ে রশিদ দেখে গামছাওয়ালাকে। বিড়ি ও ম্যাচ পকেটে রেখে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে রশীদ। বাসটা আবার চলা শুরু করেছে।
দুপাশের গাছপালাগুলোর ডালপালা বাতাসের ঝাপ্টায় বেঁকে যাচ্ছে। রাস্তা ফাঁকা দেখে ড্রাইভার সেরাম টান দিছে। একটু ঠান্ডা লাগছে। নীচে যেতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু উপায় নেই। বিড়িতে কষে দুটো টান দিতে পারলেও শরীরকে গরম করা যেত। কিন্তু নতুন আইন, সবার সামনে ধুমপান করা যাবে না। আরে যেটা প্রকাশ্যে করা যাবেনা, সেইটা বিক্রিরই বা দরকারটা কি? রশীদ চিন্তাটাকে পেছনে নিয়ে যায়।ওর সেই ছোটবেলায়। প্রচন্ড শীতের রাত। ওর মা বিছানায় অসুস্থ। ভীষণ জ্বর। কাঁপছে। ঘরে যতো কাথা কাপড় ছিলো, সব ওর মাকে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বেড়ার ফাক দিয়ে হু হু করে বাতাস আসছে। ওদের বাকী কাপড় দিয়ে সেই সব ফাঁক-ফোকড় বন্ধ করার চেষ্টা করে দুই বাপ-বেটা শুধু দুইটা গামছা পড়ে আছে। শরীরের উপরে দুজনের কিছুই নাই। মাঘ মাসের শীতে কাঁপতে কাঁপতে রশীদের বাবা বলে চলেছেঃ ভয় নাই রশীদের মা। কোনোমতে আইজকের রাইতটা কাটাই দিতি পারলি বাইচা গেলি। আল্লাহরে ডাকো। বাপজান, তুই ও আল্লাহরে ডাক।
রশীদ কাঁপতে কাঁপতে আল্লাহকে ডাকে।একসময় শীতের কাছে হার মানে। বলেঃ বাজান, আর তো পারতেছি না। কিছু একটা গায় দেওন লাগে। ওর বাবা বলেঃ না, বাজান। দেখস না তোর মার অবস্থা। আর ঘন্টা তিনেক পর ই সুর্য ঊঠবে। তখন তোর মারে নিয়া গঞ্জে যাবো। এইটুকুন কষ্ট কর দিকিন বাজান।।
অণুগল্প
বিষয়: সাহিত্য
৯৯২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন